শুক্রবার , ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হামিদচরের সাইফুলের অপকর্ম

নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন হামিদচর এলাকার মৃত শামসুরের ছেলে মোঃ সাইফুল (৩৮) স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদার হলেও বরাবরই থেকে যেতো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে সম্প্রতি হামিদচর এলাকার কর্ণফুলী রিভারভিউ রেস্টুরেন্টে ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ রিয়াদ (২৬) নামে রেস্টুরেন্ট কর্মচারী খুন ও অন্তত ৮ জনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনার অন্যতম মাস্টার মাইন্ড এই সাইফুলকে গ্রেপ্তার করেন র‌্যাব-৭। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে সাইফুল সেই মামলায় ২ দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে। সুত্রে জানা যায়, সাইফুল নিজেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, দানবীর ও সমাজ সেবক হিসেবে পরিচয় দিলেও সে একজন ঝুট ব্যবসায়ী। চান্দগাঁও ও এর আশপাশে এলাকার গার্মেন্টস থেকে ঝুট সংগ্রহ ও আধিপত্য বজায় রাখতে সাইফুল গড়ে তুলেছে একাধিক গ্যাং।

এসব গ্যাং প্রকাশ্য দেখভালের দায়িত্ব পালন করছে সাইফুলের সেকেন্ড ইন কমান্ড স্থানীয় মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোঃ বাবুল (২৮)। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এই বাবুলের বিরুদ্ধে শুধু চান্দগাঁও থানাতেই একাধিক হত্যা, হত্যা চেষ্টা সহ ১০টি মামলার হদিস পাওয়া গেছে। এসব মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বেশির ভাগ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সংঘবদ্ধ ভাবে। স্থানীয়দের মতে, বাবুলকে ব্যবহার করে মূলত সাইফুলই বেশীর ভাগ ঘটনা ঘটিয়েছে। সাইফুল বিশাল বাহিনী ব্যবহার করে ঝুট ব্যবসায় একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক বনে গেছে। আর সেই অর্থ ব্যয় করে গায়ে জড়িয়েছে দানবীর ও সমাজ সেবকের তকমা।
গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে চান্দগাঁও থানাধীন রিভার ভিউ রেস্টুরেন্টে সাইফুল এর নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালানো হয়। এসময় রেস্টুরেন্টের কর্মচারী ও স্থানীয়রা বাধা দিলে তাদের বেধরক মারধর ও এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। হামলাকারীদের আঘাতে রেস্টুরেন্টে কর্মরত আনুমানিক ৮ জন কর্মচারী গুরুতর আহত হয়। পরবর্তীতে আহতদের মধ্যে রিয়াদ নামের রেস্টুরেন্ট কর্মচারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (১৪ মার্চ রাত ২টায়) মৃত্যুবরণ করেন। নিহত রিয়াদ রিভারভিউ রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিল। উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে অধিক রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
১৩ মার্চের সেই আলোচিত ঘটনার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একজনেকে হত্যা ও অন্তত ৮ জনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনার আগ মুহূর্তে লুঙ্গি ও নীল গেঞ্জি পরিহিত সাইফুলকে ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে ঘটনায় পেছনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পরিষ্কার ভাবে দেখা গেছে৷ সে সময় সাইফুলের সাথে হত্যা মামলার আসামি নয়নকে ধারালো অস্ত্র হাতে দেখা গেছে এছাড়া একই ফুটেজে অপর আসামি জুয়েল, কবির প্রকাশ হাসান, রহিম ও অজয় প্রকাশ রাজ্জাককেও স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। অজয় ঘটনার দিন বাবুল সহ হাতেনাতে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়৷ আরেকটি ফুটেজে আসামি তৌহিদ সহ অন্যান্য আসামিদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে ভিকটিমদের কোপাতে দেখা যাচ্ছে। সন্ত্রাসী তৌহিদকে ঘটনার কয়েকদিন পর গ্রেফতার করে চান্দগাঁও থানার পুলিশ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবুল কাশেম বলেন, সেদিন সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের আঘাতে আমার নিজের দুই ছেলে অভি ও বাবু মারাত্মক আহত হয়ে এখন পঙ্গুত্বের পথে। নিহত রিয়াদ আমার শালীর ছেলে। সিসিটিভি ভিডিওতে আপনারা দেখবেন মামলার দুই নম্বর আসামি রুবেল আমাকেও ছুরি মেরেছিল। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গেছি। আহত অভি ও বাবু দুই সহোদর কান্না জড়িত কণ্ঠে এই প্রতিবেদককে বলেন, সন্ত্রাসীরা প্রতিদিন হামিদচর নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে ছিনতাই ইভটিজিং করতো। এসবের প্রতিবাদ করার ওরা রেস্তোরাঁর সিকিউরিটিকেও আহত করেছিল। আমরা সম্মিলিত ভাবে এসবের প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিত ভাবে আমাদের উপর হামলা হয়।
মামলার বাদি আলহাজ্ব ইউসুফ সওদাগর বলেন, ‘আমি মহল্লা কমিটির সদ্দার। ৩রা মার্চ আমি এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে মাদক বিরোধী সমাবেশ করি। এছাড়া সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম্য বন্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি। তাই সন্ত্রাসীরা প্রধানত আমাকে হত্যা করতেই আমার রেস্তোরাঁয় সেদিন হামলা করেছে।’ পলাতক আসামীরা নানা ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে ফলে কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে জানান ইউসুফ সওদাগর।
এই ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) মোঃ শরীফ জানান, ঘটনায় অভিযুক্ত সাইফুল ও তৌহিদকে আদালতের নির্দেশে দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদ আজ (৩১ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত এই দুইজনকে ঘটনার সময়ের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। মামলার তদন্তে সব কিছু উঠে আসবে। চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ জাহেদুল কবির বলেন, হামিদ চরের ঘটনার সাথে সাথেই মূল অভিযুক্ত সহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত ৪ জনকে আমর গ্রেফতার করেছি। অন্যান্য আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারে অভিযান ও মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।